ভগবান সব কিছু ঠিক করে দিচ্ছেন না কেন?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তো সর্বশক্তিমান। তিনি ইচ্ছা মত্রেই সব কিছু করতে পারেন। কলিযুগে প্রতিনয়ত অন্যায় হিংসা প্রতারণা হানাহানি চলছে। তিনি তো ইচ্ছা করলে এসব পাপকর্ম থেকে মানুষকে বিরত করে জগতের মঙ্গল বিধানে প্রত্যক্ষ ভুমিকা নিতে পারেন। কিন্তু নিচ্ছেন না কেন? তাহলে এই জগতে দুর্বিষহ পরিস্থিতিটা তাঁরই ইচ্ছার প্রকাশ?
আসলে শাস্ত্রে বলা হয়েছে আমরা এই জগতে এসে পড়েছি ভগবানের সেবা বিমুখ মনোভাব নেওয়ার ফলে।
ভগবান আমাদের স্বতন্ত্র স্বাধীনতা দিয়েছেন, যাতে আমরা ভালো হয়ে তাঁর কাছে ফিরে যেতে পারি, কিংবা এই জগতে থেকে অন্যায় অবিচারও করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে এই জগতের অধিকাংশ মানুষই জড় জগৎটাকে ভালোবাসতে চায়। কিন্তু ভগবানকে ততটা ভালবাসতে চায় না।
অতএব দুর্বিষহ পরিস্থিতিটাই তো আমরা পেতে চেয়েছি, না হলে আমরা সবাই ভক্ত হওয়ার জন্য তৈরি হতাম।
লোকেরা ধর্মশীল হতে চায় না। ধর্ম হচ্ছে ভগবানের দেওয়া আইন। আইন লঙ্ঘন করে আমরা স্বতন্ত্র ইচ্ছার অপব্যবহার করতেই পছন্দ করি। অতএব, পরিণামে শাস্তি দুর্ভোগ পাওয়াটাই আমাদের উচিত। নতুবা শিক্ষা হবে না।
অতএব উচিত শিক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের এখানে দুর্বিষহ পরিস্থিতি বজায় থাকুক-এটি ভগবানের ইচ্ছে।
যদি আমরা ভগবানকেই পেতে চাই তবে তিনি আমাদের সেরূপ বুদ্ধি দান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিন্তু এই দুঃখময় জগৎটার পরিবর্তন সাধন ভগবান প্রত্যক্ষভাবে করে দিন তার ফলে আমরা সব জগৎবাসী সুন্দরভাবে আঁটঘাট মেরে থাকবো-এরকম কল্পনা করা ঠিক নয়।
কেননা, তাহলে তো সুন্দর বা মঙ্গলের মর্যাদা কেউ দেবে না। পান্ডব আর কৌরব যদি এক হয়ে যায়, কিংবা আঠারো দিনের মাহাভারতের যুদ্ধ একদিনেই শেষ হয়ে যায় তাহলে তো আর মহাভারতের মূল্য মর্যাদা থাকত না।
চৌদ্দ বছরের বনবাস দুঃখ একদিনেই, কিংবা সীতাহরণকারী রাবণকে যদি মুহূর্তের মধ্যেই নিহত করা যেত তাহলে তো বাল্মিকীর রামায়ণ রচনার কোন প্রয়োজন পড়ে না। সেইভাবে এই জগতের কোন প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কোনদিন হবে না।
জীবাত্মা কোন জড়বস্তু নয়। নিছক যন্ত্রের মতোও নয়। সে নিজের মনের মতো করে চলবার স্বাধীনতা চাইবে।
যে পড়াশুনা করে পরীক্ষা দিল সে পাশ হল এবং যে সারা বছর ফাঁকি দিয়ে ফেল করল সেও পাশ হয়ে যাক-এই রকম নিয়ম জগতে কেউ চায় না।
যদি কেউ মন্তব্য করে, পরীক্ষাটাই তুলে দিয়ে সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়া হোক, তাহলে পরীক্ষা বলে কথাটির মূল্য কেউ দেবে না। পড়াশুনার কোন মর্যাদাও থাকবে না।
এইভাবে শেষ পর্যন্ত এই জগৎসহ ভগবানেরও মূল্য মর্যাদা কেউ দেবে না। একথা বুদ্ধিমান ব্যক্তি সহজেই হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন।
বাঞ্ছাকল্পতরুভ্যশ্চ কৃপাসিন্ধুভ্য এব চ।
পতিতানাং পাবনেভ্যো বৈষ্ণবেভ্যো নমো নমঃ ।।
Post a Comment