ভগবান আনন্দময়, তবে তার সৃষ্ট এই জগতে আনন্দ নেই কেন?

সর্বলোকমহেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তো আনন্দময়। তবে তার সৃষ্ট এই জগতে আনন্দ নেই কেন?

জগৎ যেরুপ হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে সকলেই আনন্দে রয়েছে। আনন্দ যদি না থাকত তবে জীব এতকাল কিভাবে থাকতে পারে।

জীব যদি জানত যে এই জগৎ দুঃখে ভরা তখন তারা অবশ্যই বৈকুন্ঠ জগতে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেস্টা চালাত।

কিন্তু তারা এই জগতে সুখে, আর আনন্দে আছে বলেই বৈকুন্ঠ জগতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হরিভজন করেই না।

আমরা জানি বিষ্ঠা কত নোংরা বিষয়। তাতে আমাদের বিরক্তি ভাব হলেও বিষ্ঠাভোজী পোকাগুলি কিছুতেই বিষ্ঠা ছেড়ে চলে যেতে চাইবে না। কারণ বিষ্ঠা খেয়ে সে আনন্দ পাচ্ছে।

লাইটের সামনে হাজার হাজার পোকা লাফালাফি করছে। তাদের ধরে এনে দূরে নিক্ষেপ করলে আবার তারা লাইটের কাছে ধেয়ে আসে।

লাইটের কাঁচে বারে বারে ঠোক্কর খেয়ে খেয়ে মরে যাবে তবুও লাইট ছেড়ে যেতে চায় না। কারণ লাইটেই সে আনন্দ পাচ্ছে।

আমাদের জড় দেহ কতই ব্যাধিগ্রস্ত হচ্ছে, বহু অসুবিধা হচ্ছে, তবুও দেহ ছাড়তে বা মরতে কেউ চাইছি না। কারণ এই দেহে থেকেই আমরা আনন্দ পেতে চাই।

ভগবান আনন্দময়, তবে তার সৃষ্ট এই জগতে আনন্দ নেই কেন?

কত জন্ম-জন্মান্তর ধরে আমরা এই ঘুরপাক খাচ্ছি তার কোন হিসাব নেই। তবুও সেই সব অসুবিধাগুলি আমরা চিন্তা করি না।

আমরা যেরুপ আনন্দ চাই তা-ই ভগবান আমাদের দিচ্ছেন। উড়বার আনন্দ পেতে চাইলে হয়তো উড়োজাহাজে চড়ার সৌভাগ্য না হলেও পরবর্তী জন্মে মশা হওয়ার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী হয়ে আনন্দ পেতে চাইলে হয়তো এই জন্মে সুযোগ না হলে ছারপোকা শরীর ধারন করে প্রধানমন্ত্রীর গদির ভেতরে জীবন যাপন করবার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।

বড় বড় মাছ খাওয়ার আনন্দ পেতে চাইলে বাজ, গোসাপ, তিমি হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে সন্দেহ নেই।

অতএব, এই জগৎ এক প্রকার আনন্দ ভোগের জগৎ বটে।

ভগবদসেবা-উন্মুখ মনসিকতা থাকলে বৈকুন্ঠ জগতের আনন্দ পাওয়া যাবে। কিন্তু ভগবদসেবা-বিমুখ মানসিকতা থাকলে জড় জগতের আনন্দ পাওয়া যাবে।

ভগবদ বিমুখতাই ভগবানের নির্ধারিত এই দুঃখময় জগতে আমাদের পতিত হওয়ার কারণ বলে শাস্ত্রে নির্দেশিত হয়েছে। এখানে মায়াসুখ-আনন্দে সবাই রয়েছে।

গাধা যতই গর্দভীর লাথি খেয়ে মুখ ফোলাক না কেন তবুও সে গর্দভী-সঙ্গের আনন্দ পেতে চায়।

চিন্ময় আনন্দ এবং জড় আনন্দ দুটোই এই মনুষ্য জন্মে লাভ করা যায়। যেটাই আমরা চাই সেটাই পেতে পারি।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই জগৎ দুঃখময়। দুঃখ দিয়েই তৈরি।

দুঃখময় হল কেন, সুখময় করে জগৎটা নির্মিত হল না কেন, এই রকম প্রশ্ন করাই অমূলক।

ভগবান বলেছেন 'জগৎটাই দুঃখময় করেই গঠন করা হয়েছে'। সুদুর্লভ মনুষ্য-শরীর লাভ করে জীব এই দুঃখময় ভগসাগর উত্তীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যে পরমার্থ সাধন করবে, হরিভজন করবে।

এইভাবে জীবন যাপন করতে করতে একদিন দেহত্যাগ করে আনন্দময় জগতে উন্নীত হতে পারবে। তাই এই জগৎ আসলে পরমার্থ সধন ক্ষেত্র। এই জীবনটি চিরমুক্তির পরপারে যাওয়ার পরম সুযোগ। দুঃখ থেকেই শিক্ষা হয়।

সবাই যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তন করুন আর সুখী হউন। সারাজীবন ভগবদ সেবা আর হরিনাম করে অবশেষে আমরা আমাদের আসল আনন্দময় জগতে ফিরে যেতে পারবো।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।

ভগবান আনন্দময়, তবে তার সৃষ্ট এই জগতে আনন্দ নেই কেন? ভগবান আনন্দময়, তবে তার সৃষ্ট এই জগতে আনন্দ নেই কেন? Reviewed by Tanmoy Roy on October 01, 2022 Rating: 5

No comments

Hare Krishna 🙏